“লটকন” ফলটির নাম শুনলেই যেন জিভে পানি চলে আসে। লালমনিরহাট জেলার চাষীদের কাছে অর্থকরী ফসল এটি। তেমন কোনো পরিচর্চা ছাড়াই উৎপাদিত হয় লটকন ফল। তাই ক্রমেই ক্রমেই অর্থকরী ফসল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে লালমনিরহাট জেলার চাষীদের কাছে।
সুস্বাদু আর পুষ্টিগুণে ভরপুর লালমনিরহাটের লটকন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়ে থাকে। স্বল্প ব্যয়ে আর অল্প পরিচর্চায় অভাবনীয় ফলন আসায় বাণিজ্যিকভাবে দিন দিন বাড়ছে লটকন চাষের জনপ্রিয়তা।
জানা যায়, লালমনিরহাট জেলার ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার উঁচু জমিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও খনিজ উপাদান থাকায় এই এলাকার মাটি লটকন চাষের জন্য খুব উপযোগী।
বাণিজ্যিকভাবে চাষ ছাড়াও বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন ঘর-বাড়ীর উঠানে ও অন্যান্য বাগানে এবং পতিত জমিতেও লটকন গাছ রয়েছে।
আঙ্গুরের মতো থোকায় থোকায় ধরে বলে ইংরেজিতে এর নাম Burmese grap। বৈজ্ঞানিক নাম Baccaurea sapida। লটকনের স্বাদ অম্লমধুর এবং পুষ্টিমান প্রচুর। লটকনে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-২, ভিটামিন-সি রয়েছে। এছাড়া ফলটি ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আমিষ, স্নেহ, লৌহসহ বিভিন্ন খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ। রোজ আমাদের দেহের জন্য যে পরিমাণ ভিটামিন সি প্রয়োজন ৪টি লটকনে সেই চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট।
লালমনিরহাটের গ্রামের ভিতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে ছায়াঘেরা লটকন বাগান। বাগানের অধিকাংশ গাছ গোড়ালি থেকে উপরি অংশের শাখা-প্রশাখায় লটকন ফলে জড়িয়ে আছে। দেখতে মনে হয় যেন পুরো গাছে লটকনের ফুল ফুটছে।
কোদালখাতা গ্রামের লটকন চাষী মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক বলেন, ১০-১২বছর আগে গ্রামের লোকজন শখের বসে বাড়ির আঙ্গিনা ও উঠানে লটকনের চারা লাগায়। দেখতে সুন্দর ও খেতে সুস্বাধু হওয়ায় ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় লাভজনক ফলন হিসেবে লটকনের চাষের ব্যাপক প্রসার হয়েছে।
একই গ্রামের লটকন চাষি আব্দুল হামিদ মিঞা বলেন, চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলের কারণে লটকনের ফলন ভালো হয়েছে।
লালমনিরহাটের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম খন্দকার বলেন, লটকনে রোগ-বালাইয়ের তেমন সংক্রমণ না হওয়ায় উৎপাদন খরচ কম ও ফলনও ভালো।